Friday, April 16, 2010

রাখি

রাখি
জাহিদ আকোন

ওই বুড়ি, তোর একুশ বছর হলো!
এইতো সেদিন, কই বেশিদিন?
আমার কোলের গদির ’পরে,
রয়ে সয়ে বসতি ওরে;
আরছুটতাম আমি দিন কি দুপুর
বেড়িয়ে হেথায় কিংবা সুদূর।
নইলে কি তোর কান্নাকাটি থামে?
আমার বারো বাজে ঘেমে ঘেমে।
আজভাবতে পারিস একুশ বছর গেলো?
আম্মা আছেন অষ্টপ্রহর কাজে,
গেরস্থালির সবকিছু তাঁর কাঁধে।
আরসকাল বেলা আব্বা যে বের হন –
মাদ্রাসাতেই দিন কাটিয়ে দেন।
ক্লান্তদেহে বাসায় ফিরে
টুকিটাকি কম্ম সেরে
একটু জিরে বাজার তরে সাইকেল চড়ান।
আব্বা আবার হোমি’ওষুধের ডাক্তারি করান।
বুঝতে তো পাই, ব্যস্ত সবাই কাজে
সারাটা দিন সকাল থেকে সাঁঝে।
আরতুই -?
ওরেহাসিস নে রে, শুনিস –
তুই বুড়িটা কাজ তিনটা করতে খালি পারিস –
কেউ দোলালে দোলনাতে ঘুম পাড়তে পারিস;
কোলান্তরে ঘুরে ঘুরে হাসতে পারিস;
আরএকটুকু ক্ষণ পরে পরে
কটকটিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে
ছোট্ট তোর ওই ধড় কাঁপিয়ে
কাঁদতে শুধুই পারিস!
হম্‌,কান্না তো নয়; এ তোর ভাষা, জানি –
‘কোলে তোলো, বাইরে যাও এক্ষুনি।’
আরআমি –?
ইশকুলে সব পাঠ্য সারি
বাসায় আমি যেই না ফিরি
আম্মা হাঁকেন – “নিয়ে এরে বাইরে ঘুরে আয়।”
কী আর করি, আজ্ঞা মানি; বিকেল পড়ে যায়।
পাড়ার সকল ছেলেমে’রা খেলে টুকু-দাড়িয়াবাঁধা;
ক্রিকেট খেলাও চলে।
খেলতে খেলতে বিকেল গড়ায় সন্ধ্যা ঘনায়
সবাই বাড়ি ফেরে।
আমার কি হয়, বলবো কী হায়!
হয়না খেলা, তুই যে কোলায়!
দর্শক আমি সবার খেলা হেরি।
সুযোগ হলে তোরে কোলে
ক্রিকেটের আম্‌পায়ারগিরি করি!
দেড়খানি যুগ পর –
এল আবার আজকেরে তোর জন্মদিনের ঘট।
মোরস্মৃতি-আতুর মনের মাদুর বায়োস্কোপের পট।
সেই পটে চে’ দেখি –
‘কবে যেন তুই বেধেঁছিস এই দু’হাতে রাখি।’
হায়!বুঝতে পারিস নাকি?
একুশ বছর পার করেছিস! একি!
আজ বিধাতার তরে আবদার কিছুই না চাই আর,
তোরদুই জীবনে ঋদ্ধির হোক অমিত প্রসার।
আরো আরো একুশ বছর তুই বেঁচে র’ সুখে,
দুঃখ যেন না ছোঁয় তোকে, সুদিনকে না রোখে।
আরএকটি কথা বলেই ফেলি রাখবো নারে ঢাকি’
হাত থেকে না ছিঁড়িস রে তুই অদৃশ্য সেই রাখি।

১৫ এপ্রিল, ২০১০
সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা
(আমার ছোট বোনের ২১তম জন্মদিনে)