Friday, February 14, 2014

ভালোবাসা?

ভালোবাসা?

-জাহিদ আকোন


ভালোবাসা সে তো মায়ের চোক্ষে ছোটটির জন্যে মায়া।
জন্মের পরে প্রসূতির ব্যথা পুরোপুরি ভুলে যাওয়া।
ভালোবাসা মানে ছোট্ট পায়ে সোনামণিটির গুটি গুটি হাঁটা ধরা।
দুই পা এগিয়ে এক পা পিছিয়ে সযতন হাতে - ধড়াস! করে পড়া।

ভালোবাসা মানে একটা মিষ্টি (না জেনে ভিতরে ট্যাবলেটসহ) গেলা!
মুখে পুরে দিয়ে চিবোতে গিয়ে মা-বাবার ধোঁকা ধরে ফেলাটার জ্বালা।
ভালোবাসা সে তো রাত-বিরেতে পিচ্চির হঠাৎ ভ্যাঁ করে কেঁদে ওঠা।
কান্না ভাঙাতে সেই ভররাতে বাবার সাথে একটুকু ঘুরে আসা।

ভালোবাসা মানে বিস্কুট নিয়ে দু-ভাইবোনের মারামারি শুরু করা।
একটু পরে ঝগড়া থামিয়ে দুইজনে মিলে ভাগাভাগি করে খাওয়া।
ভালোবাসা সে তো ক্লাসের বেঞ্চে সিট দখলের প্রতিযোগিতায় নামা।
সকালে নাস্তা শেষ না করেই সবার আগে ইসকুলে ছুটে যাওয়া।

ভালোবাসা সে তো মাঝে মাঝে ক্লাসে স্যারের বকুনি খাওয়া।
একশতে ফের নব্বই পেয়ে কলার উঁচু করে 'সেইরকম' ভাব নেওয়া!
ভালোবাসা মানে বন্ধুরা মিলে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়া।
রমযান মাসে তারাবি নামাজে কোনমতে আট রাকাহ্ শেষে দৌড় দেওয়া।

ভালোবাসা সে তো বিটিভিতে সাড়ে আটটায় রাতে প্যাকেজ নাটক দেখা।
দশটার নিউজ পার করে জাগা; আর তার ফলে ওইঘর থেকে বাবার বকুনি খাওয়া।
ভালোবাসা কি সে শেষ বিকেলে বন্ধুরা মিলে প্রতিদিন সেই আড্ডা দেয়াটা নয়?
স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলা, ক্রিকেটের ম্যাচ- আরও কত খেলা, কত জয় পরাজয়!

ভালোবাসা সে তো মফস্বলের স্কুল শেষ করে সব ছেড়ে ছুড়ে শহরে কলেজে পড়া।
সীমার বাঁধন কেটে ফেলে দিয়ে অসীমের পানে অবিরাম ছোটা আচমকা শুরু করা।
ভালোবাসা মানে মেসে-ক্যান্টিনে বাধ্য হয়েই ছাই-পাশ খাওয়া-দাওয়া।
দু'মাস না যেতে মায়ের হাতের রান্নার ঘ্রাণ পেতে বাড়ি ছুটে যাওয়া।

ভালোবাসা মানে অনেক কষ্টে বুয়েটে অথবা মেডিকেলে চান্স পাওয়া।
অথবা কোথাও চান্স না পেয়ে রবার্ট ব্রুসের মাকড়সার মত অধ্যাবসায়ী হওয়া।
ভালোবাসা কি নয় ভার্সিটি-হলে সিট না পেয়ে গণরুমে বসবাস?
ভালোবাসা হল- রেজাল্ট খারাপ! উঠে পড়ে লাগ্, ফলাফল: হা-হুতাশ!!

ভালোবাসা হল একদিন এক মনের মতন মানুষের দেখা পাওয়া।
তার মন পেতে সব ভুলে গিয়ে পাগলের মত অদ্ভুত কিছু করা।
ভালোবাসা সে কি সেই তারই থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাওয়াটাও নয়?
দুঃখের চোট, জীবনে আঁধার; তবু চেয়ে দেখো, সময়ে সে করে ক্ষয়।

ভালোবাসা সে তো উচ্চশিক্ষা; এইবার দেখো দেশটাই ছেড়ে যাওয়া।
বিদেশের মাটি, নতুন পৃথিবী; প্রতি সপ্তাহে স্কাইপিতে উঁকি দেওয়া।
ভালোবাসা সেতো কত শহরের কত শত রঙ, কত রকমের মানুষের সাথে চলা।
দেশে দেশে ঘুরে, প্লেনে ট্রেনে চলে, তুষারে মরুতে ভুপেনের গান 'আমি যাযাবর' গাওয়া।

ভালোবাসা হল চাকুরি খুঁজতে পত্রিকা ঘাটা বিডিজবসের বারোটা বাজিয়ে ছাড়া।
একবার ফের পরীক্ষা দেওয়া, সুট-টাই পরে কত শতবার ভাইভাতে ফেস করা।
ভালোবাসা হল নতুন এক বস, নতুন অনেক কলিগের সাথে মেশা।
প্রেজেন্টেশান, প্রোমোশান, আরো কত কী নতুন আধুনিক পরিভাষা!

ভালোবাসা হল শেষ পর্যন্ত কারো সন্ধান পাওয়া,
যার চোখনীলে দেখে পার করা যায় জগতের মায়া।
ভালোবাসা হল একটি ছোট্ট পরিবার গড়ে তোলা,
একসাথে সুখে দুখে জীবনের তরীটি ভাসিয়ে চলা।

ভালোবাসা হল দাদুর ভাংগা গালে তার ভরা জীবনের গান শোনা।
এই গান শুনে উৎসুক চোখে নাতি নাতনির অতীতের ছবি আঁকা।
ভালোবাসা সে তো এক এক করে আপন মানুষ অসীমে হারিয়ে ফেলা।
সেই শোকে কাঁদা; শোক ভুলে ফের নতুন আশায় বুক বেঁধে ছুটে চলা।

ভালোবাসা কি হে শুধু দুজনের সফল প্রেমের গাঁথা?
না না, তা তো নয়। ভালোবাসা সে তো জীবনের প্রতি পাতা।
তাই আমি ভাবি, এই যে সকলে বানিয়েছে 'এক' দিন!
এই 'ভালোবাসা দিবস' কি ভালোবাসাকে করেনি হীন?

না, ঠিক হয়ত হীন সে করেনি। এরও কিছু আছে ভাল ও মন্দ দিক।
মন্দ না বলে ভালটাই বলি, ভাববার মেলা কিছুই আছে তো ঠিক।
আটপৌরে এ জীবনে আমরা ভুলে বসি ভালোবাসা।
তারে আমাদের সম্মুখে ফের এ দিবসের নিয়ে আসা!

কিন্তু দেখ হে আমরা কি করি, ভুলে যাই মহা-ভালোবাসার সে রূপ!
তা ভুলে সকলে সঙ্কীর্ণ চোখে দেখি, ভাবি শুধু কপোত-কপোতী-সুখ।
ভালোবাসা পাবে তার সে আসল রূপের দেখা সে দিন
যেদিন সকলে বুঝতে পারবে জীবনের প্রতি পলের অসীম ঋণ।

১৪.০২.২০১৪
ভালোবাসা দিবস ২০১৪
ফোর্নেবু, নরওয়ে