Thursday, July 17, 2008

হৃদি নিরুদ্দেশ

ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম মুয়াযযিনের আযানে। উঠেই দেখি বাইরে ঝু...উ...উ...উ...ম বৃষ্টি। মনটাই উদাস হয়ে গেল। নামায পড়লাম। বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই... একটানা সুরে। ঢাকা শহরের বাসার ছাদে বসে ঝুম বৃষ্টির গান শোনায় তেমন মজা নাই... খালি মনে হচ্ছিল পল্লী গাঁয়ের কথা... ছোটকালে কি মজাটাই না করতাম... বৃষ্টি শুরু হলেই দিতাম দৌড়... বৃষ্টিতে ভিজে, আমাদের পুষ্করিণীতে গোসল করে যখন বাড়িতে ফিরতাম, আম্মার কি যে বকুনিটা খেতাম... আহা! সেসব কিছুই এখন আর নাই... এসব ভাবতে ভাবতে একটা কবিতা লিখে ফেললাম...


এই কবিতাটা স্বরবৃত্ত ছন্দে লেখা... এই ছন্দে পর্বগুলো সাধারণত ৪ মাত্রার করে হয়... তবে পংক্তির পর্ববিন্যাস অসমপর্বিক আর এটিতে অতিপর্বের ব্যবহার লক্ষণীয়... কবিতাটা এখানে তুলে দিলাম।






হৃদি নিরুদ্দেশ

জাহিদ মাসুদ

আজি হৃদয় আমার হৃদির মাঝে নাই।
হৃৎপাখিটা খাঁচার শিকল ভেঙ্গে গেল কই?
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজে মরি,
তন্ন তন্ন মনপিঁজরে ঘুরি।
কই তাহার দেখা নাই।
তোরা কেউ কি আছিস, কইতে পারিস ভাই,
কোথায় গেলে কী করিলে খোঁজটি তাহার পাই?
কোন পাথারে হায়রে তারে যাচি?
ঘুরছে সে যে কোথায় নাচি নাচি।
আজি মুখর আষাঢ়, আকাশ ভেঙে পড়ে।
পুকুর-ডোবা, সাগর-নদী গগণ-জলে ভরে।
দিবারাত্রি দুপুর-সকাল
ঝুমুর ঝুমুর কাহারবা তাল।
এই সুরের তালে মিষ্টি লয়ে বিষ্টি বাজায় গান।
আমি জানলা-পাশে রইছি ব'সে, শুনছি সে সুর-তান।
কিন্তু আহা! মনটা কাহাঁ হারিয়ে গেলো মোর?
আজ ঘরের কোনায় রইতে বোধ'য় চায় না পরাণ ওর।
বুঝি তাই সে আজি খাঁচা ছাড়ি বেড়ায় চষি দেশ,
মেঘের সঙ্গী হয়ে রঙ্গি চলে ভঙ্গি তাহার বেশ।
সে আজ বাদলা দিনের রূপের খোঁজে চলছে নিরুদ্দেশ।

১৬ জুলাই, ২০০৮
বুধবার, ধানমন্ডি


মধুর তোমার শেষ যে না পাই প্রহর হল শেষ...
জাহিদ

3 comments:

2bORnot2b said...

কদিন আগে দুই বিঘা জমি কবিতাটা তোদেরকে পাঠিয়েছিলাম। তোর কবিতার ভূমিকা দেখে সেখান থেকে কয়েকটা লাইন মনে পড়ে গেল-

সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে রাত্রে নাহিকো ঘুম,
আতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি আম কুড়াবার ধুম।
সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর, পাঠশালা-পলায়ন—
ভাবিলাম হায় আর কি কোথায় ফিরে পাব সে জীবন!



এখন বর্ষা নিয়ে যেহেতু কবিতা সেহেতু বর্ষা নিয়েই বলি-
আষাঢ়, শ্রাবনতো দূরে থাক, পৃথিবীর খুব কম জায়গাতেই বর্ষাকাল বলে আলাদা ঋতু আছে। "আজি মুখর আষাঢ়, আকাশ ভেঙে পড়ে। পুকুর-ডোবা, সাগর-নদী গগণ-জলে ভরে।"- বৃষ্টির রূপতো এই দূরদেশেও একইরকম তবু আমরা কেন বর্ষাকাল নামে আলাদা একটা ঋতু বানালাম? এটা নিয়েই ভাবছিলাম।

"আজ ঘরের কোনায় রইতে বোধ'য় চায় না পরাণ ওর।
বুঝি তাই সে আজি খাঁচা ছাড়ি বেড়ায় চষি দেশ,
মেঘের সঙ্গী হয়ে রঙ্গি চলে ভঙ্গি তাহার বেশ।
সে আজ বাদলা দিনের রূপের খোঁজে চলছে নিরুদ্দেশ।"

এখানেও আজ প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। কবিতা আমার আসে না, আমি কবিতা লেখতে পারি না- পারলে হয়ত তোর মত করেই এভাবে লেখার চেষ্টা করতাম। আসাধারণ হয়েছে কবিতাটা। "আমি জানলা-পাশে রইছি ব'সে, শুনছি সে সুর-তান। কিন্তু আহা! মনটা কাহাঁ হারিয়ে গেলো মোর?"- আসলে তোর মত মন হারানো কবিদের কারণেই হয়ত আমাদের বর্ষাকাল বলে আলাদা একটা ঋতু আছে।


এমন আরো অনেক কবিতা এবং পোস্ট চাই-
ফয়সাল

Jahid Akon said...

ধন্যবাদ ফয়সাল, তোর সুন্দর কমেন্ট এর জন্য...

“আমি অনেক বড় কবি হতে চাই...

তাই তোদের দোয়া বড্ড বেশি চাই।“

তোদের এইসব কমেন্ট আমাকে অনেক অনেক উদবুদ্ধ করে...:)

আসলে বর্ষার রূপ মনে হয় বেড়ে গেছে এই কবিদের কারণেই... এক রবি ঠাকুরই বর্ষা নিয়ে যা লিখেছেন ... তাতেই বোঝা যায় এই ঋতুটা কবিদেরকে কিরকম আকর্ষণ করে...আর শুধু বর্ষা না, প্রকৃতির সব রূপই কবিদের কাছে অন্যরকম মাদকতায় ধরা দেয়।

পৃথিবীর সব দেশেই মূল ঋতুর সংখ্যা চার... গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত আর বসন্ত। কিন্তু বাংলাদেশের প্রকৃতি এর ফাঁকেও এক নতুন রূপে ধরা দেয় বৃষ্টির মায়ায় আর নবান্নের মাদকতায়। এদের প্রভাব বাঙালির জীবনধারণে অতুলনীয়। আর কবিদের তো কথাই নেই... তারা এর মাঝেই দেখতে পান মনের সুখ-দুঃখকে...জীবনের রূপকে...

ধন্যবাদ
জাহিদ

Jahid Akon said...

সেদিন মেইলে একটা কমেন্ট লিখেছিলাম -

বললি সেদিন কমেন্ট দিতে মনে অতি কষ্ট নিয়ে
"যদি আমি পেতাম হতে কবি তোরি মতন, ওহে,
লিখেই যেতাম মনের কথা ছন্দে ছন্দে মন ভরিয়ে!
কিন্তু মহাদুখের কথা-কবিতা ভাই মোর আসে না।
বর্ষা নামের এই ঋতুটার জন্ম কেন হায় বুঝি না।"
আমি বলি-এমন কাজটি আছে কোথা বল না ওরে,
যে কাজ মোদের প্রাণের প্রিয় বন্ধু সে ফয়সাল না পারে?
অবাক হয়ে র'লাম চেয়ে, পরাণ বাজে মেলের মোহে,
'মহাজাগতিক' হয়ে সে বঁধুর কলম কেমনে ছোটে?
কিভাবে এক প্রবাস-ছাত্র
গদ্যে যার তুলনার পাত্র
এই জগতে নাই,
সে আজ হেসে জয়ীর বেশে
লিখল 'আমরা সবাই কবি'
উপমা তার নাই।
এমনি আরও চাই হে সদাই ব্লগের-মেলের সম্ভার ভাই।
মনকে মোদের পাখির ডানায় উড়িয়ে যেন সুদুর হারাই।